চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলা সহ ভারতীয় সীমান্তবর্ত্তি দেশের উন্নতম গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ঢাকা-খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম পুরাতন মহাসড়কের যোগাযোগ ব্যবস্থা যেকোন মূহুর্তেই বন্ধ হয়ে যাওয়ার পথে। খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রামের সংযোগস্থ মীরসরাইয়ের করেরহাট ইউনিয়নের সব’কটি বেইলী ব্রিজ ও নেরো ব্রিজের অবস্থা আশঙ্কা জনক হওয়ায় এমন মন্তব্য করেছেন উপজেলা ১নং করেরহাট ইউনিয়নের স্থানীয় বাসিন্দারা।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার করেরহাট থেকে রামগড় পর্যন্ত ১০টি বেইলী ব্রিজ ও ২০টি নেরো ব্রিজের দীর্ঘদিন সংস্কার কাজ না হওয়ায় লোহার রেলিং গুলো জং ধরে নষ্ট হয়ে গেছে, খসে পড়ছে পলেস্তর, গর্তের সৃষ্টি হয়েছে ব্রিজের মাঝামাঝি। ব্রিজগুলোর মধ্যে করেরহাটে ২টি, বালুটিলায় ২টি, তুলাতলীতে ১টি, ভাঙ্গা টাওয়ারে ১টি, কয়লা বাজারে ১টি ও বাগান বাজারে ১টি বেইলী ব্রিজের অবস্থা খুবই আশঙ্কা জনক। এছাড়াও অর্ধশত বছর আগে নির্মিত ২০টি নেরো ব্রীজের অবস্থাও একি রকম যা এখনকার যুগোপযুগি নয়।
এসব নড়বড়ে ব্রিজ দিয়ে ছোট বড় হাজার হাজার গাড়ি ঝুঁকি নিয়ে বহন করে যাচ্ছে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার কাঠ, বাঁশ, বালি সহ বিভিন্ন ধরণের পণ্য। যা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল সহ বিদেশেও রপ্তানী হচ্ছে। এছাড়া ঢাকা-খাগড়াছড়ি সড়ক ফেনী জেলার সঙ্গেও সহজ যোগাযোগের মাধ্যম। ব্রিজগুলোর সাধ্য নিঃশেষ হয়ে এলেও এর সংস্কার বা পূর্ণনির্মাণে নজর নেই সংশ্লিষ্ট বিভাগের। এসব ব্রিজগুলো এখন এতই ঝুঁকিপূর্ণ যে এর উপর দিয়ে পায়ে হেঁটে যেতেও আতঙ্কে ভোগেন স্থানীয়রা। পথচারী ছাড়াও এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও কলেজে পড়–য়া ছাত্র-ছাত্রীরা প্রতিদিন যাতায়াত করাটাও কতটা ভীতিকর তা বলাই বাহুল্য। ইতিমধ্যে কর্তৃপক্ষ ব্রীজের পাশে সাইন বোর্ড লাগিয়ে উল্লেখ্য করেছে, ৫ টনের অধিক ওজনের গাড়ি চলাচল নিষেধ। এই নিষেধাজ্ঞা থাকলেও গাড়ি চালকরা কর্তৃপক্ষের নিষেধ অমান্য করে পণ্য বোঝাই করা মাত্রাতিরিক্ত ওজনের গাড়ি নিয়ে চলাচল করছে। যার ফলে যে কোন সময় ঘটে যেতে পারে মারাত্মক কোন দুর্ঘটনা।
এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপদ বিভাগের কার্য সহকারী কর্মকর্তা নুরুল আপছার জানান, চট্টগ্রাম থেকে খাগড়াছড়ি যাওয়ার একমাত্র মাধ্যম এই গুাংত্বপূর্ণ সড়কের রামগড় পর্যন্ত সব ব্রিজের অবস্থা করুণ। চট্টগ্রাম-খাগড়ছড়ি সড়কের রামগড়ের যে কোন একটি ব্রিজ ধ্বসে পড়লে বন্ধ হয়ে যাবে ঢাকা-খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম এই গুাংত্বপূর্ণ সড়কটি। ৪০-৪৫ বছর আগে নির্মিত এসব ব্রিজ গুলোর বেহাল দশার কথা আমরা কর্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে জানিয়েছি, কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। তাই ব্রিজগুলোর ভাঙ্গা জায়গায় ইট, মাটি, বালি, পাথর দিয়ে কোন রকমে বর্তমান অবস্থায় ধরে রেখেছে স্থানীয়রা।
এছাড়াও মীরসরাই-ছাগলনাইয়া সীমান্তের শুভপুর ব্রিজের অবস্থাও খুবই আশঙ্কা জনক। উপজেলার সাবেরহাট সীমান্তবর্ত্তি ফেনী নদীর উপর শুভপুর ব্রীজে মরণফাঁদ সৃষ্টি হয়েছে। অর্ধশত বছর পার করা এই ব্রীজটির মরণফাঁদ গুলো সুস্পষ্ট হয়ে সকলের নজরবন্ধি হলেও কোন সংস্কার কাজের উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। ভারসাম্য হারিয়ে ব্রিজের মাঝামাঝি ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, অযতœ অবহেলা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ব্রীজটি হয়ে পড়েছে হুমকির সম্মুখীন। কিছু অসৎ চক্র ও স্থানীয় লোকজন ব্রীজের মাঝামাঝি এক পাশের রেলিং চুরি করে নিয়ে গেছে। এতে করে যে কোন সময় বড় ধরণের প্রাণহানী আশংকা করছে স্থানীয় জনগণ। মীরসরাই উপজেলার ১নং করেরহাট ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন বলেন, অতি শীঘ্রই ব্রীজটির নতুন ভাবে নির্মাণ না করলেও সংস্কার করা প্রয়োজন। এ ব্যাপারে ফেনী সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আতাউল রহমান শুভপুর ব্রীজটি দুরাবস্থার কথা স্বীকার করে বলেন, এখনও পর্যন্ত কোন সরকার ব্রীজটির সংস্কার বা নতুন ভাবে নির্মাণের কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। কারণ বিদেশী কোন অনুদান ছাড়া এ কাজটি করাও সম্ভব নয়।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস